বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১ |   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্দোলনের কৌশল নিয়ে বিএনপিতে বিভেদ 

প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২২ ১৫ ০৩ ০২  

আন্দোলনের-কৌশল-নিয়ে-বিএনপিতে-বিভেদ 

আন্দোলনের-কৌশল-নিয়ে-বিএনপিতে-বিভেদ 

আন্দোলনের কৌশল নিয়ে  বিভক্তি বাড়ছে বিএনপিতে। বর্তমানে এ বিভক্তি এতটাই বেড়েছে যে, এখন প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। 

আগামী ২৮ মার্চ বাম গণতান্ত্রিক জোট হরতালের আহ্বান করেছে। বিএনপি এ হরতালকে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু বিএনপির সমর্থন প্রত্যাখ্যান করে বাম গণতান্ত্রিক জোট। 

তারা বলেছে, বিএনপির সমর্থন তাদের দরকার নেই। সুস্পষ্টভাবে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব রাখতে চাচ্ছে বাম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো। 

বাম জোটের একজন নেতা বলেন, বিএনপি উগ্র মৌলবাদীদের সঙ্গে প্রকাশ্য-গোপনে সম্পর্ক রাখে। এ কারণেই বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করার তাদের কোনো অভিপ্রায় নেই। কিন্তু বামদলের এ প্রত্যাখ্যান বিএনপির মধ্যে তোলপাড় তৈরি হয়েছে। 

বিএনপির নেতারা বলেন, কার সঙ্গে পরামর্শ করে, কেন এবং কীভাবে বাম গণতান্ত্রিক জোটের হরতালকে সমর্থন করলো বিএনপি, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। বারবার বিএনপি কেন ছোট হচ্ছে, সেটিও দেখা দরকার।

আরো পড়ুন>>> প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা আশা করি বিএনপি মনে রাখবে: তথ্যমন্ত্রী

বিএনপির একটি পক্ষ মনে করছে, কৌশলগত কারণে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য প্রয়োজন এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন বলেও ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বিএনপির একটি অংশের প্রবল বাধার কারণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ উদ্যোগ থেমে গেছে। 

বিএনপির একটি অংশ বলছে, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল এবং একক শক্তি নিয়ে তাদের আন্দোলন করা উচিত। বিএনপি অন্যদের কাছে কেন ঐক্যের জন্য ধরনা দিতে যাবে? বরং বিএনপি আন্দোলন করলে অন্যরা বিএনপি'র সঙ্গে এসে যুক্ত হবে। যেকোনো আন্দোলনে বিএনপি'র নেতৃত্বে থাকা উচিত বলেও তারা মনে করছেন। 

এই অংশের বিএনপি নেতৃবৃন্দ বিগত নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়েও তীব্র সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির কিছু নেতার। 

তারা মনে করেন যে, ওই সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে বিএনপি'র আদর্শচুত্যি হয়েছে এবং জনগণের কাছে বিএনপি'র অবস্থান দুর্বল হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একক আন্দোলনের পক্ষপাতি। 

তারা মনে করেন বিএনপিকে আসলে আন্দোলন শুরু করতে হবে। বিএনপি যদি শক্তিশালী আন্দোলন করতে পারে তাহলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিএনপিকে অনুসরণ করবে। কিন্তু বিএনপি যদি জোটের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা চায় তাহলে পরে রাজনীতিতে বিএনপি তার শেষ গুরুত্বটুকুও হারাতে পারে। আর সে কারণেই বিএনপি'র মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ে মতো নেতারা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চেয়ে এখন একক আন্দোলনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। 

বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একক হোক বা যৌথ হোক, আন্দোলনের নেতৃত্ব থাকতে হবে বিএনপির হাতেই। কিন্তু আমরা বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে ছেড়ে দিয়েছি। 

ঐ নেতা বলেন, ২০১৮ এর নির্বাচনের আগে একবার আমরা বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে মুরব্বি মেনেছি। একবার ড. কামাল হোসেনকে মুরব্বি মেনেছি। অথচ এরা কেউই বিএনপির শুভাকাঙ্খী ছিলেন না। সেই সময় যদি বিএনপি এককভাবেই সবকিছু করতো, তাহলে হয়তো পরিস্থিতি এত খারাপ হতো না।

বিএনপির ঐ নেতা মনে করেন, এখনো আমরা যে বিভিন্ন নাম সর্বস্ব পকেট রাজনৈতিক দলগুলোকে এতো তোয়াজ করছি, সেটির পরিণাম বিএনপির জন্য ভালো হবে না। 

তবে বিএনপির অনেক নেতাই এখন মনে করেন, বিএনপির একক আন্দোলন করার মতো শক্তি বা সাহস কোনটাই নেই। আর একারণেই আন্দোলনের কৌশল কি হবে, বিএনপি এককভাবে আন্দোলন করবে নাকি একটি রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলবে সেটি এখন বিএনপি'র জন্য বড় বিভক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর